মোঃ আফ্ফান হোসাইন আজমীর, গংগাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের গংগাচড়ায় ২০ দিনের হারিয়ে যাওয়া নবজাতক শিশুকে ৫ ঘন্টার মধ্যেই তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে একপ্রকার নজির স্থাপন করেছেন গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশ। তারা প্রমাণ করে দিলেন পুলিশ জনগণের প্রকৃত বন্ধু।
গংগাচড়া মডেল থানা সুত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর দুপুরে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বাগপুর চোত্তাপাড়া গ্রামের বসবাসরত একজন মা’ তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজনদের নিয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় এসে নবজাতক শিশু হারিয়ে ফেলেছেন মর্মে থানায় মৌখিক অভিযোগ করেন।
সেখানে তার পরিবারের লোকজন বলেন নবজাতকের মা’ লাকি বেগম কন্যা শিশুটিকে নিয়ে সকালে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে একাই গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দিতে নিয়ে আসেন।
কিন্তু হাসপাতালের ইপিআই টিকাদান কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, মঙ্গলবার হাসপাতালে টিকা দেয়া হয় না। পরে তিনি হাসপাতালের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিকশাযোগে বাড়িতে ফেরত যাওয়ার পথে পূর্ব থেকে বসে থাকা কেউ একজন রহস্য জনক উপায় অবলম্বন করে তার কাছ থেকে বাচ্চাটি নিয়ে চলে যান। অনেক খুঁজে বাচ্চাটি না পেয়ে অবশেষে তারা মডেল থানা পুলিশের সহযোগিতার আবেদন করেন।
সমস্ত ঘটনা শুনে মডেল থানার ওসি মোঃ দুলাল হোসেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে প্রকৃত তথ্য উৎঘাটন ও বাচ্চাটি উদ্ধারের জন্য তার নেতৃত্বে পুলিশ ইউনিটকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পরে বিভিন্ন উপায়ে ৫ ঘন্টা না যেতেই হাসপাতাল থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে গঙ্গাচড়া ৪ নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের মনাকশা নামক গ্রামে মোঃ মানিক মিয়া নামক ব্যাক্তির বাড়িতে বাচ্চাটির অবস্থান নিশ্চিত করে পুলিশ কর্তৃক অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে।
বাচ্চাটি কিভাবে তার মায়ের কোল থেকে তাদের কাছে এলো জানতে চাইলে মানিক মিয়া জানান, দুপুর ১২ টার দিকে একজন মহিলা হঠাৎ করে তাদের বাড়িতে এসে তার স্ত্রী’র কাছে নবজাতক শিশুকে কোলে দিয়ে বলে, “বোন আমার বাচ্চাটিকে একটু দেখে রাখবেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে একটু পরেই আসছি আমার উপর দয়া করেন।”
মানিক মিয়া বলেন, তার অসংগতিপূর্ণ কথাবার্তা ও তাকে দেখে সে সময় মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে মনে হলে আমি এবং আমার স্ত্রী আশপাশে বসবাসরত এলাকার লোকজনকে ডেকে এনে বিষয়টি অবগত করি। বাচ্চাটির মায়ের অনুরোধে সবার উপস্থিতিতে বাচ্চাটি রেখে দেই। তখন মহিলাটি শিশু বাচ্চাটি রেখে চলে যান কিন্তু দীর্ঘ ৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও বাচ্চাটি নিতে তার মা বা পরিবারের অন্য সদস্য না আসায় আমরাই চিন্তিত হয়ে বাচ্চার খবর গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ স্থানীয় লোকজনকে জানালে তারা মডেল থানায় খবর দেন এবং মডেল থানা পুলিশ তাদের কাছ থেকে বাচ্চাটি নিয়ে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে বাচ্চার বাবা রুকুনুজ্জামান জানান, তার আরেকটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্ত্রী দ্বিতীয় বাচ্চা হওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে কিছুটা বিকারগস্ত, কিন্তু তাকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই। সে প্রায় বাসার অনেক কাজ করেও ভুলে যায়।
গংগাচড়া মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ দুলাল হোসেন জানান, আমরা অভিযোগ পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি এবং তাৎক্ষণিকভাবে হাসাপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।